আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): বাংলাদেশে সর্বোচ্চ নেতার কার্যালয়ের প্রতিনিধি হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন সাইয়্যেদ মাহদী আলিযাদেহ মুসাভি হাওজা নিউজ এজেন্সির সঙ্গে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে ফাতেমীয় মহাকাব্যের সভ্যতাগত তাৎপর্য এবং ইসলামী বিশ্বের বিশেষত উপমহাদেশ ও বাংলাদেশের বৌদ্ধিক ও সামাজিক অগ্রগতির সঙ্গে তার সম্পর্ক বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।
তিনি তার বক্তব্যে গুরুত্বারোপ করে বলেন, হযরত যাহরা (সা.আ.)-এর জন্ম ও শাহাদাত দিবস ফাতেমীয় সত্যকে পুনর্অভিব্যক্ত করার এক মূল্যবান সুযোগ, এবং এটি শুধু আবেগ বা ধর্মীয় আনুগত্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়।
ফাতেমীয় মহাকাব্য আসলে একটি সভ্যতাগত ঘটনা— এমন এক মোড়বদলের ঘটনা, যা ইসলামের ইতিহাসকে দুটি স্পষ্ট অধ্যায়ে বিভক্ত করে: ফাতিমিয়্যাত-পূর্ব ও ফাতিমিয়্যাত-পরবর্তী যুগে।
এটি কোনো অতিরঞ্জন নয়; কারণ নবী করিম (সা.)-এর ইন্তেকালের পর সাকিফার ঘটনায় ইসলামের প্রকৃত পথ বিচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু হযরত যাহরা (সা.আ.)-এর অনন্য ও অবিচল ব্যক্তিত্ব ইসলামের আসল পরিচয়কে উন্মোচিত করেন এবং তা মৌলিক বিচ্যুতি থেকে রক্ষা করেন।
দক্ষিণ এশিয়ায় ইসলামী চিন্তাধারার বিকাশে উপমহাদেশের ঐতিহাসিক ভূমিকার প্রতি ইঙ্গিত করে সাইয়্যেদ আলিযাদেহ মুসাভি বলেন, উপমহাদেশ সর্বদা ইসলামী বুদ্ধিবৃত্তিক উৎপত্তির কেন্দ্রস্থল এবং আহলে বাইত (আ.)–এর প্রতি প্রেম ও আনুগত্যের উজ্জ্বল নিদর্শন।
বাংলাদেশে হযরত যাহরা (সা.আ.)-এর প্রতি গভীর ভক্তি ও শ্রদ্ধা জনগণের হৃদয়ে দৃঢ়ভাবে প্রোথিত, তবে এই মহান চরিত্রের সভ্যতাগত ও দর্শনমূলক দিকগুলো এখনো যথাযথভাবে অনুসন্ধান করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন:
“তরুণ ও প্রাণবন্ত এক সমাজ, বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী এবং বাংলাদেশের অন্তর্মুখী ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক পরিবেশ— এই সব উপাদান মিলিয়ে ফাতেমীয় বার্তা প্রচার ও ব্যাখ্যার জন্য এক উর্বর ক্ষেত্র সৃষ্টি করেছে।
আমরা প্রতিনিধি কার্যালয়ে ক্লাস, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক ও মিডিয়াবিষয়ক কার্যক্রমের মাধ্যমে ফাতেমীয় জীবনধারা ও যুক্তিকে সমাজে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি, যাতে এই চিন্তা বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ এবং অভিজাত মহলের মাঝে স্রোতের মতো প্রবাহিত হয়।”
বাংলাদেশে সর্বোচ্চ নেতার প্রতিনিধি আরও বলেন:
“আজ বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় লাখ লাখ ছাত্রী এবং বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে সক্রিয় নারী রয়েছেন। এই সমাজ এমন এক আদর্শ নারীমডেল গ্রহণে প্রস্তুত, যা যুক্তিবাদ, আধ্যাত্মিকতা, মানবিক মর্যাদা এবং সমাজে কার্যকর ভূমিকার সমন্বয় ঘটায়।”
তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, হযরত যাহরা (সা.আ.) সেই আদর্শের পরিপূর্ণ প্রতিরূপ— এমন এক মডেল, যা দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম নারীদের সামনের পথ নির্দেশ করতে পারে।
শেষে, হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন আলিযাদেহ মুসাভি জোর দিয়ে বলেন:
“ইসলামী উম্মাহকে তার ভবিষ্যৎ গড়তে হলে আল্লাহপ্রদত্ত বিশুদ্ধ ও অখণ্ড মানদণ্ডে ফিরে যেতে হবে।
ফাতেমীয় যুক্তিবাদই ইসলামের সঠিক পথ নির্ধারণের মানদণ্ড; যেখানে এই যুক্তি জীবিত থাকবে, সেখানে ইসলামী সভ্যতা বিকশিত হবে।
আজ, আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি, ইসলামী বিশ্বকে— বিশেষত উপমহাদেশের দেশগুলোকে— এই ফাতেমীয় সভ্যতার সত্য অনুধাবন ও পুনর্ব্যাখ্যা করতে হবে।”
Your Comment